১। শেয়ার বাজারের সাথে প্রত্যক্ষ
ভাবে জড়িত ইস্যু সমুহঃ
- শেয়ার বাজার, রিয়েল এস্টেট, ব্যাংকে জমাকৃত
অর্থ, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর
ফলে কিছু অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ার বাজারে আসার সম্ভাবনা আছে।
- রিয়েল এস্টেটে অপ্রদর্শিত অর্থ
বিনিয়োগের সুযোগ গত বছরেও ছিল, যার ফলে এই বছরে নতুন করে খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়ার
কিছু নেই। এই সুযোগ আগে থেকেই বিদ্যমান আছে।
- শেয়ার বাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের
ক্ষেত্রে ৩ বছর টাকা লক-ইন রাখার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শেয়ার বাজারে
অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহ তৈরি হতে পারে। কারন অন্য খাত গুলোতে
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই রকম কোন শর্ত নেই।
- শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির
করহার ২.৫% কমানো হয়েছে। এর ফলে ভাল কোম্পানি গুলো শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হতে
আরও নিরুৎসাহিত হবে।
- শেয়ার বাজার উজ্জীবিতকরনে যেই সমস্ত
পদক্ষেপের কথা বাজেটে বলা হয়েছে তার কিছু অংশ আগের বাজেটেই বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু
অংশ বাস্তবায়নের কাজ কিছু দিন আগে শুরু হয়েছে (যেমন, শেয়ার বাজারে ব্যাংকের
বিনিয়োগ বাড়ানো)। আবার কিছু অংশ যেমন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো, আস্থা
বাড়ানো, ঋন ইত্যাদি নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। যার ফলে পদক্ষেপগুলো
কতটুকু কার্যকরী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
২। স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার এবং অর্থ বরাদ্দঃ
- সরকার আগামী অর্থ বছরে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। এর ফলে ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বেশি ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে সব ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিচক্ষন ভাবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে সেইটা বলা যায় না। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান হয়ত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
৩। তৈরিপোশাক সহ রপ্তানি খাতে কর কমানোঃ
- রপ্তানি মুল্যের উপর উৎসে কর ১% থেকে ০.৫%
করার ফলে কোম্পানির ব্যবসায় লাভ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে যদি কোম্পানি তার বিক্রি
ধরে রাখতে পারে।
- যেই কোম্পানিগুলো পিপিই এবং মাস্ক তৈরি করে
রপ্তানি করতে পারবে তাদের জন্য অনেক ভাল ব্যবসা করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
- কোভিড-১৯ এর জন্য অনেক রপ্তানি আদেশ বাতিল
হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠা অনেক কোম্পানির জন্যই অনেক কষ্টকর হবে।
৪। সিগারেটের দাম এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিঃ
- বিগত বছর গুলোতে সিগারেটের
দাম বাড়লেও BATBC
এর মত কোম্পানির বিক্রি এবং মুনাফা কমেনি। তবে কোভিড-১৯ এর কারনে যেহেতু অনেকেরই
আয় কমে গেছে এবং ধূমপানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বাড়ে সেই জন্য সিগারেটের
চাহিদা কিছুটা কমার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে কিছু ধূমপায়ী
কম দামী সিগারেটের দিকে ঝুঁকতে পারে। সেক্ষেত্রে BATBC এর মত কোম্পানির মুনাফা কমার
সম্ভাবনা তৈরি হবে।
৫। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভ্যাট এবং শুল্ক হ্রাসঃ
- যেই সমস্ত কোম্পানি কৃষি যানবাহন তৈরি করে, তারা কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভ্যাট এবং শুল্ক হ্রাস করার ফলে লাভবান হবে। ACI Motors Limited (Subsidiary of ACI) প্রধানত কৃষি যানবাহন তৈরি করে থাকে। ফলে ACI এই ভ্যাট এবং শুল্ক হ্রাস থেকে লাভবান হতে পারে। এছাড়া IFADAUTOS ট্র্যাক্টর তৈরি করে থাকে যার ফলে তারাও কিছুটা লাভবান হতে পারে যদিও ট্র্যাক্টর তাদের প্রধান পন্য নয়।
৬। মোবাইল সেবায় সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিঃ
- মোবাইল সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১০%
থেকে ১৫% করার ফলে গ্রাহকদের সেবা গ্রহনে খরচ বাড়বে।
- মোবাইল সেবায় সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সেবা গ্রহন কমে যাবে সেইটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। কারন কোভিড-১৯ এর কারনে ঘরে থাকার কারনে গ্রাহকদের সেবা গ্রহন বাড়ছে। এবং বাধ্য হয়েও মোবাইল সেবার দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে GP এবং BTRC এর ভেতরকার দ্বন্দ্ব নিরসন না হওয়া পর্যন্ত GP এর ব্যাপারে কোন কিছু নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না।
৭। সিরামিক পন্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপঃ
- সিরামিক সিঙ্ক, বেসিন ইত্যাদির উৎপাদন পর্যায়ে ১০% সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে RAKCERAMIC এর মত কোম্পানির খরচ বাড়তে পারে। যার ফলে মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে। এছাড়াও কোভিড-১৯ এর কারনে যেহেতু অনেকেরই আয় কমে গেছে, তার ফলে এই ধরনের পন্যের চাহিদা, এই আপদকালীন সময়ে কিছুটা কমে যেতে পারে।
৮। কম্প্রেসার উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধিঃ
- SINGERBD এবং WALTON এর মত কোম্পানির জন্য, কম্প্রেসার উৎপাদনে কাঁচামাল
আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধি, সুফল বয়ে আনতে পারে। এর ফলে কম্প্রেসার উৎপাদনে খরচ
কিছুটা কমতে পারে।
- তবে কোভিড-১৯ এর কারনে যেহেতু অনেকেরই আয় কমে গেছে, তার ফলে এই ধরনের পন্যের চাহিদা, এই আপদকালীন সময়ে কিছুটা কমে যেতে পারে।
৯। জুতা শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধাঃ
- APEXFOOT,
BATASHOE, FORTUNE, LEGACYFOOT এর মত
কোম্পানির জন্য, কাঁচামাল
আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধি, সুফল বয়ে আনতে পারে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা
কমতে পারে।
- তবে কোভিড-১৯ এর কারনে দেশীয় বিক্রি এবং রপ্তানি অনেকটাই কমে গেছে।
১০। ষ্টীল শিল্পের কাঁচামালে কর হ্রাসঃ
- BSRM,
RSRM, GPHISPAT, SSSTEEL এর মত
কোম্পানির জন্য, কাঁচামাল
সংগ্রহে কর হ্রাস, সুফল বয়ে আনতে পারে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কমতে পারে।
- তবে কোভিড-১৯ এর কারনে মেগা প্রজেক্ট সহ অন্যান্য কন্সট্রাকশনের কাজে অনেকটাই ধীর গতি চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে লৌহ পণ্য বিক্রিতে নেতিবাচক প্রবনতা দেখা দিতে পারে।
১১। সরকারি কোম্পানির অলস অর্থ সরকারি কোষাগারে জমাঃ
- যেই সমস্ত কোম্পানির অনেক বেশি পরিমানে অলস অর্থ ব্যাংকে রয়েছে, তাদের কারও কারও, কিছু অর্থ, ভবিষ্যতে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হতে পারে। যার ফলে এই রকম কোম্পানিগুলোর সুদ ভিত্তিক আয় কমে আসতে পারে। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত PADMAOIL, MPETROLEUM, JAMUNAOIL, TITASGAS এর বিপুল পরিমান অর্থ ব্যাংকে রয়েছে।
১২। স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের একটি কাঁচামালে রেয়াত সুবিধা সম্প্রসারনঃ
- BPML এর মত কোম্পানির জন্য, কাঁচামাল সংগ্রহে রেয়াত সুবিধা সম্প্রসারন, সুফল বয়ে আনতে পারে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কমতে পারে।
এছাড়াও শেয়ার বাজারের সাথে সম্পৃক্ত আরও কিছু ইস্যু বাজেটে উঠে এসেছে। তবে উপরের ১২ টি পয়েন্ট শেয়ার বাজারের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত।
Written By: Md. Shihab Alam Khan (মোঃ শিহাব আলম খান)
Youtube Channel Link: https://www.youtube.com/financeschool
Facebook Page Link: https://www.facebook.com/fsclbd
Facebook Profile Link: https://www.facebook.com/Shihab.Alam.Khan
0 Comments